প্রা
ক-স্বাধীনতা যুগে কাছাড় জেলা, যা বর্তমানের বরাক উপত্যকা, সর্বভারতীয়
রাজনীতির মূলস্রোতেরই অংশীদার ছিল। রাজনৈতিক মানচিত্রে সুরমা-বরাক
উপত্যকা অবিভক্ত বাংলার এক উজ্জ্বল ভূখণ্ড হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছিল ।
স্বাধীনতা সেই বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করার সঙ্গে সঙ্গে কাছাড়ের রাজনীতিকেও
বিভক্ত করে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বাংলা প্রাদেশিক কমিটির সাথে যুক্ত
ছিল কাছাড় কংগ্রেস যা স্বাধীনতা পরবর্তী সসয়সীমায় আসাম প্রদেশ কংগ্রেস
কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয় । এই বিয়োজন এবং সংযোজন প্রক্রিয়ার একটি সুদূরপ্রসারী
প্রভাব লক্ষ্য করা যায় উপত্যকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গুণগত মানে ।
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বরাবরই বরাক সুরমা উপত্যকার
আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী ছিল । গুণগতমানেও অবিভক্ত বঙ্গের জাতীয়তাবাদী
আদর্শের রাজনীতি থেকে তা ছিল ভিন্ন । ফলে, স্বাধীনতার ঊষালগ্নেই কাছাড়ের
রাজনৈতিক চরিত্র তার সুমহান অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে । এই প্রক্রিয়ার
বিষক্রিয়া আজও বরাক উপত্যকার রাজনীতিতে দৃশ্যমান ।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসই নির্বাচনী রাজনীতির নিরিখে এই উপত্যকায় সর্ববৃহৎ
দল । ভারতীয় জনতা পার্টিও এখানকার নির্বাচন-ভিত্তিক সংসদীয় রাজনীতিতে
শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছে । এমনকী আসামের রাজনীতিতে অতি সাম্প্রতিক
উত্থান যে দলের আসাম ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, সেই দলটিও ভোট ব্যাংকের
বড় অংশের দাবিদার এখন । তুলনায় ক্রমশই হীনবল হচ্ছে বাম রাজনীতি ।
সাম্প্রদায়িকতা, জাতি, গোষ্ঠী, এসবই বরাকের রাজনীতিকে নির্বাচনী সাফল্য
এনে দেয় । যে দিক দিয়ে দেখলে সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে চরিত্রগত কোনও
ফারাক নেই বরাকের রাজনীতির ।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজন্ক বিষয় হচ্ছে এটাই যে বরাকের নির্বাচনী রাজনীতির
সাথে এর জনগণের স্বার্থের রাজনীতির কোনও সংশ্রব নেই । রাজনৈতিক ইস্তাহার
স্থির হয় দিল্লি কিংবা দিসপুরেই । ভাষা সংগ্রামের চেতনাও রাজনৈতিক ফ্রন্টে
পুরোপুরি ব্যর্থ ।