এসো আমার ঘরে ভূগোল ইতিহাস ভাষাসংগ্রাম সাহিত্য সংস্কৃতি রাজনীতি সঙ্কলন অন্যসূত্র
ভূগোল
সাম্প্রতিক সংবাদ

রাক নদী বিধৌত উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের তিনটি জেলা কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা বরাক উপত্যতা নামে পরিচিত ।  ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই অঞ্চলের মোট আয়তন ৬৯২২ বর্গ কিলোমিটার ।  এই জনপদ ৯২১৫″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ও ৯৩১৫″ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল ।  আসামের ভৌগোলিক আয়তনের মোট ৮.৯% অংশ নিয়ে বরাক উপত্যকা গঠিত ।  ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরাক উপত্যকার জনসংখ্যা আসাম রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১১.২% ।  এই জনপদের উত্তরে উত্তর কাছাড় জেলা ও মেঘালয়, দক্ষিণে মিজোরাম, পূর্বে মনিপুর এবং পশ্চিমে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা । 

পাহাড়, টিলা, সমতলভূমি, নীচু জলাভূমি নিয়ে বরাক উপত্যকা এক বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ড ।  নীচু জলাভূমিগুলি দুধরনের ।  বিল ও হাওড় ।  হাওড় অঞ্চল শীতকালে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় ।  বিল অঞ্চল সারাবছরই জলময় থাকে ।  এই অঞ্চলের ভূমি মূলত পলিমাটিজাত এবং উর্বর । 

এই অঞ্চলের প্রধান নদী বরাক মনিপুরের আঙ্গামী নাগা পাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে বরাক উপত্যকার বুক চিরে এঁকেবেঁকে এগিয়ে গিয়ে কাছাড় জেলার কাটিগড়া রাজস্ব ব্লকের হরিটিকরে পৌঁছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি জলধারায় বিভক্ত হয়েছে ।  কুশিয়ারা নদী একই সঙ্গে করিমগঞ্জ জেলায় পৌঁছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক সীমারেখা তৈরি করেছে ।  বরাক উপত্যকার অন্য প্রধান নদীগুলি হল জিরি, চিরি, মধুরা, জাটিঙ্গা, ধলেশ্বরী, ঘাগড়া, কাটাখাল, লঙ্গাই, সিংলা, সোনাই । 

অসংখ্য ছোটখাটো টিলাভূমি নিয়ে বড়াইল, ভুবন, পাঁচগ্রাম, ছাতাছড়া, মোহনপুর, সরসপুর ইত্যাদি বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রধান পাহাড় অঞ্চল । 

বরাক উপত্যকার জলবায়ু প্রধানত উষ্ণ, আর্দ্র এবং সাব ট্রপিক্যাল ।  এ অঞ্চলের গড় বৃষ্টিপাত ৩১৮০ মিমি এবং সারা বছর গড়ে ১৪৬ দিন বৃষ্টিপাত হয় (আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, করিমগঞ্জ-এর তথ্য অনুযায়ী) ।  দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ।  এ ছাড়াও বছরের মার্চ এপ্রিল মাসে প্রাক-মৌসুমী বায়ুর প্রভাবেও এই অঞ্চলেও বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ।বরাক উপত্যকার সমতলভূমি গাঙ্গেয় বঙ্গভূমিরই সম্প্রসারণ ।  ইন্দো-এরিয়ান জনগোষ্ঠীর জনসাধারণ এই অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রধান অংশ ।  ইতিহাসের এক দীর্ঘ সময় ধরে ইন্দো-মঙ্গোলয়েড, অস্ট্রিক এবং অন্যান্য অনার্য জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে এই অঞ্চলের জনবিন্যাস গঠিত হয়েছে । 

ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের মর্জি অনুযায়ী এই অঞ্চলের মানচিত্র বারবার পরিবর্তিত হয়েছে ।  ১৮৩২ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনে আসার প্রাক সময়পর্বে ১৭৪৫ সাল থেকে ডিমাসা রাজবংশের অধীনে একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল কাছাড় ।  ডিমাসা সাম্রাজ্যের অংশ কাছাড়কে অধিগ্রহণ করার পর ১৮৩৬ সাল থেকে কাছাড়কে বাংলা প্রেসিডেন্সির ঢাকা ডিভিশনের আওতাধীন হয় ।  বরাক উপত্যকার কেন্দ্রীয় অংশ কাছাড় একটি রাজ্যের পদমর্যাদা হারিয়ে বাংলা প্রেসিডেন্সির জেলায় পরিণত হয় ।  ১৮৭৪ সালে আসাম পৃথক রাজ্য হিসাবে গঠিত হলে সিলেট সহ কাছাড় জেলাকে আসাম রাজ্যের সাথে যুক্ত করা হয় ।  ভৌগোলিক দিক থেকে এই সংযুক্তি ঘটলেও ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে এই অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য অটুট থাকে ।  স্বাধীনতার ঊষাকালে এই জনপদের সিলেট জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করা হয় এবং মাঝখানে বড়াইল পর্বতশ্রেণী দিয়ে আসাম রাজ্যের মূল জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন কাছাড় জেলাকে আসামের সাথে যুক্ত করা হয় ।  পরবর্তীতে কাছাড় জেলাকে করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা নামে আরো দুবার বিভক্ত করে দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকার বর্তমান অঞ্চল গঠিত হয়েছে ।



উনিশের ব্লগ্
আগের পৃষ্ঠা